
ইংরেজী সাল গণনার বিষয়টা ইংরেজদের আবিষ্কার নয়। তাই এটি ইংরেজী নববর্ষ নয়। এটি খৃষ্টীয় বা গ্রেগরিয়ান নববর্ষ। ইংরেজরা ১৭৫২ সালে ১ জানুয়ারীকে নববর্ষ হিসাবে গ্রহণ করে। তার ২৩০ বছর আগে, অর্থাৎ- ১৫২২ সালে ভেনিসে ১ জানুয়ারীকে নববর্ষ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। স্পেন ও পর্তুগাল ইংরেজ তথা বৃটিশদের ১৯৬ বছর আগেই ১ জানুয়ারীকে নববর্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। সেই বিবেচনায় কোন মতেই ১ জানুয়ারী ইংরেজী নববর্ষ হতে পারে না। বরং আজকের ১জানুয়ারী খৃস্টানদের গ্রেগরিয়ান নববর্ষ।
খৃস্টীয় বা গ্রেগররিয়ান ক্যালেন্ডারঃ ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খৃস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ১ জানুয়ারীতে নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। পহেলা জানুয়ারী পাকাপোক্ত ভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। খৃস্টানদের তথাকথিত ধর্মযাজক পোপ গ্রেগরিয়ানের নামানুসারে যে ক্যালেন্ডারের প্রচলন হয়, ইতিহাসের পালাবদলে আজকে সেই ক্যালেন্ডারকেই ইংরেজী ক্যালেন্ডার বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে ইউরোপসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।
ইসলামে উৎসবের রূপরেখা
আমরা অনেকে উপলব্ধি না করলেও, উৎসব সাধারণতঃ একটি জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়। উৎসবের উপলক্ষগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে উৎসব পালনকারী জাতির ধমনীতে প্রবাহিত ধর্মীয় অনুভূতি, সংস্কার ও ধ্যান- ধারণার ছোঁয়া। উদাহরণস্বরূপ খৃষ্টান সম্প্রদায়ের বড় দিন তাদের বিশ্বাস মতে স্রস্টার পুত্রের জন্মদিন। মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হত ২৫ মার্চ এবং তা পালনের উপলক্ষ ছিল এই যে, ওই দিন খৃস্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট ঐশী বাণী প্রেরিত হয় এই মর্মে যে, মেরী ইশ্বরের পুত্রের জন্ম দিতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো ১ জানুয়ারী নববর্ষ উৎযাপন করা আরম্ভ করে। ঐতিহ্যগত ভাবে এই দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত।
ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন ‘সাবাত’ হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলক্ষের মাঝেই ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এজন্যই ইসলামে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন। ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (খুশী) রয়েছে। আর এটা (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) আমাদের ঈদ। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।
মুসলিম ও অমুসলিমদের উৎসবের পার্থক্য
ইসলামের এই যে উৎসব, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এগুলো থেকে মুসলিম ও অমুসলিমদের উৎসবের মূলনীতিগত একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য স্পষ্ট হয়। বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে লক্ষ্য করা উচিত। অমুসলিম, কাফির কিংবা মুশরিকদের উৎসবের দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য স্বেচ্ছাচারী আচরণের দিন। এদিনে তারা সকল নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে, মদ্যপান ও ব্যভিচার। এমনকি খৃষ্টান সম্প্রদায়ের বহু লোক তাদের পবিত্র বড় দিনেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে মদ্যপ হয়ে উঠে এবং পশ্চিমা বিশ্বে এই রাত্রিতে বেশ কিছু লোক নিহত হয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালানোর কারণে।
অপরদিকে মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই বিষয়টি বুঝতে হলে ইসলামের সার্বিকতাকে বুঝতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত। যেমনটি কুরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺖُ ﺍﻟْﺠِﻦَّ ﻭَﺍﻟْﺈِﻧْﺲَ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌْﺒُﺪُﻭﻥِ অর্থাৎ- ‘আমি জ্বীন ও মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি’। (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত-৫৬)।
সে জন্য মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে। কেননা মুসলিমদের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসা।
মুসলমানদের জন্য থার্টিফাস্ট নাইট পালনের বিধান
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ পালন করা নিঃসন্দেহে হারাম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুস্মরণ করবে, সে সেই জাতির
অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ)।