০৪:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তুমি যদি ফিরতে……….

  • Reporter Name
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৯
  • 716

সুমাইয়া আজিজ সিনথীয়া

দিনটি ছিলো পহেলা বৈশাখ।আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি।আমাদের পৌরসভাতে মেলা বসে।আমি আমার কিছু বান্ধবীদের সাথে গিয়েছিলাম ঘুরতে।সেখানেই দেখা হয়।ও আমাকে দেখছিলো আড়চোখে।আমিও খেয়াল করছিলাম কিছুক্ষণ।আমার অবশ্য রাগ টা বেশী।তাই মেলার মধ্যে ওরে চড় মারছিলাম।ও অবশ্য চরম লজ্জা পেয়েছিলো।ও ছিল এলাকার গুন্ডা।তাই ও যা করে তাই ঠিক।আমি তো একরোখা।তাই কারো পরোয়া না করে মেরেছিলাম।সারা কুষ্টিয়াবাসি আমার দিকে আর ওর দিকে হা করে তাকিয়েছিলো।তারপরেরদি­ন ও আমাদের বাসার সামনে আসে।আমার বাবা আর মা ভয় পাচ্ছিলো।যদি কিছু করে।কারণ ও গুন্ডা।আমরা সাধারণ মানুষ।আমরা তো কিছু করতে পারবোনা।কিন্ত হাসির বিষয় হলো ও এসে আমাকে সরি বলে যায়।যা আমাকে অবাক করে দেয়।তারপর থেকেই স্কুল যাওয়ার পথে,কোচিং যাওয়ার পথে দেখা হতো আমাদের।ভালোবাসা টা যে কখন শুরু হয়েছিল তা বলা মুশকিল।কেননা ওর সাথে আমার যেভাবে দেখা তারপর যে এত সহজ ভাবে ও আমার প্রেমে পড়ে যাবে তা ভাবা দূরহ।আস্তে আস্তে আমি আর ও শুরু করি আমাদের পথ চলা।তবে ও আমাকে প্রপোজ করে নাই।আমিই ওরে বলেছিলাম আমি ওরে ভালোবাসি।ও তখন অবাক হয়ে কেদে ফেলেছিলো।আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিয়েছিলাম।আমার পছন্দ হাওয়াই মিঠাই।স্কুল ছুটি হলে ও আমাকে দেখতে আসতো।সঙ্গে নিয়ে আসতো হাওয়াই মিঠাই।তারপর চলে আসে আমার সামনে পরীক্ষা।ও যেভাবে আমাকে সাপোর্ট দিয়েছিলো তা ভোলা অসম্ভব।ওকে অনেক ভালোবাসি বলেই হয়তো তখন আমি ওর সব কথা শুনতাম।সে বছর এক অনূষ্ঠান হয়েছিল আমাদের এলাকাতে।আমরা সবাই ছিলাম।হঠাৎ করে ও ওইখানে এসে আমার হাতে একটা চিঠি দিয়ে যায়।আমি কিছু বলার আগেই চলে যায় ও।কেন এমনটা করলো বুঝলাম না।তবে চিঠিটা পড়েছিলাম।অনেক কেদেছিলাম।চিঠিটা ছিলো ওর আমার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য একটা ক্ষুদ্র বার্তা।চিঠিতে লেখা ছিলো…..
প্রিয় সিমু….
আমাকে ভুলে যাও।তুমি এখনো অনেক ছোট।তাই আবেগে ভালোবাসছো।আমি খারাপ একটা ছেলে।এলাকার দাদা।সবাই আমাকে দেখে ভয় পায়।আমাকে কেউই ভালোবাসেনা।তাও তুমি ভালোবেসেছো এটাই অনেক। আর কিছু হওয়ার আগে আমাকে ভুলে যাও।
ইতি
তোমার সুজন।
চিঠিটা পড়ার কিছুক্ষণ পড়ে জানতে পারলাম ওকে এরেস্ট করেছিল পুলিশ মার্ডার কেসের জন্য।কিন্ত আমার মনের কোটরে এখনো ওর জন্য ভালোবাসাটা রয়েছে।ও যে জেলে ছিলো।আমি গিয়েছিলাম সেখানে কিন্ত পাইনি দেখা।
তারপর আমি চলে যায় ঢাকা।পড়াশোনা শেষ করি।তারপর ফিরে আসি কুষ্টিয়াতে।খোজ করি তাকে।তাও খবর পাইনি তার।
আজ শুধু বলতে চায়।আমি তোমাকে ভালোবাসি আজো ভালোবাসি।জানি সমাজ মেনে নিবেনা যে আমি একজন খুনির সাথে সম্পর্ক করি। তাতে আমার কিছু এসে যায় না।কেননা জীবনটা আমার।আমি কাকে ভালোবাসবো কাকে নিয়ে ঘর বাধবো সেইটা আমারইই সিদ্ধান্ত।আর আমি মানি একটা কথা অপরাধ কে ঘৃণা করো, অপরাধীকে নয়।
তোমার অপেক্ষায় এখনো পথ চেয়ে বসে আছি।তুমি যদি ফিরতে……….

Tag :

বালিয়াকান্দি মোটরসাইকেল সহ ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেফতার ৩

You cannot copy content of this page

তুমি যদি ফিরতে……….

প্রকাশের সময় : ১২:৪১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৯

সুমাইয়া আজিজ সিনথীয়া

দিনটি ছিলো পহেলা বৈশাখ।আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি।আমাদের পৌরসভাতে মেলা বসে।আমি আমার কিছু বান্ধবীদের সাথে গিয়েছিলাম ঘুরতে।সেখানেই দেখা হয়।ও আমাকে দেখছিলো আড়চোখে।আমিও খেয়াল করছিলাম কিছুক্ষণ।আমার অবশ্য রাগ টা বেশী।তাই মেলার মধ্যে ওরে চড় মারছিলাম।ও অবশ্য চরম লজ্জা পেয়েছিলো।ও ছিল এলাকার গুন্ডা।তাই ও যা করে তাই ঠিক।আমি তো একরোখা।তাই কারো পরোয়া না করে মেরেছিলাম।সারা কুষ্টিয়াবাসি আমার দিকে আর ওর দিকে হা করে তাকিয়েছিলো।তারপরেরদি­ন ও আমাদের বাসার সামনে আসে।আমার বাবা আর মা ভয় পাচ্ছিলো।যদি কিছু করে।কারণ ও গুন্ডা।আমরা সাধারণ মানুষ।আমরা তো কিছু করতে পারবোনা।কিন্ত হাসির বিষয় হলো ও এসে আমাকে সরি বলে যায়।যা আমাকে অবাক করে দেয়।তারপর থেকেই স্কুল যাওয়ার পথে,কোচিং যাওয়ার পথে দেখা হতো আমাদের।ভালোবাসা টা যে কখন শুরু হয়েছিল তা বলা মুশকিল।কেননা ওর সাথে আমার যেভাবে দেখা তারপর যে এত সহজ ভাবে ও আমার প্রেমে পড়ে যাবে তা ভাবা দূরহ।আস্তে আস্তে আমি আর ও শুরু করি আমাদের পথ চলা।তবে ও আমাকে প্রপোজ করে নাই।আমিই ওরে বলেছিলাম আমি ওরে ভালোবাসি।ও তখন অবাক হয়ে কেদে ফেলেছিলো।আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিয়েছিলাম।আমার পছন্দ হাওয়াই মিঠাই।স্কুল ছুটি হলে ও আমাকে দেখতে আসতো।সঙ্গে নিয়ে আসতো হাওয়াই মিঠাই।তারপর চলে আসে আমার সামনে পরীক্ষা।ও যেভাবে আমাকে সাপোর্ট দিয়েছিলো তা ভোলা অসম্ভব।ওকে অনেক ভালোবাসি বলেই হয়তো তখন আমি ওর সব কথা শুনতাম।সে বছর এক অনূষ্ঠান হয়েছিল আমাদের এলাকাতে।আমরা সবাই ছিলাম।হঠাৎ করে ও ওইখানে এসে আমার হাতে একটা চিঠি দিয়ে যায়।আমি কিছু বলার আগেই চলে যায় ও।কেন এমনটা করলো বুঝলাম না।তবে চিঠিটা পড়েছিলাম।অনেক কেদেছিলাম।চিঠিটা ছিলো ওর আমার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য একটা ক্ষুদ্র বার্তা।চিঠিতে লেখা ছিলো…..
প্রিয় সিমু….
আমাকে ভুলে যাও।তুমি এখনো অনেক ছোট।তাই আবেগে ভালোবাসছো।আমি খারাপ একটা ছেলে।এলাকার দাদা।সবাই আমাকে দেখে ভয় পায়।আমাকে কেউই ভালোবাসেনা।তাও তুমি ভালোবেসেছো এটাই অনেক। আর কিছু হওয়ার আগে আমাকে ভুলে যাও।
ইতি
তোমার সুজন।
চিঠিটা পড়ার কিছুক্ষণ পড়ে জানতে পারলাম ওকে এরেস্ট করেছিল পুলিশ মার্ডার কেসের জন্য।কিন্ত আমার মনের কোটরে এখনো ওর জন্য ভালোবাসাটা রয়েছে।ও যে জেলে ছিলো।আমি গিয়েছিলাম সেখানে কিন্ত পাইনি দেখা।
তারপর আমি চলে যায় ঢাকা।পড়াশোনা শেষ করি।তারপর ফিরে আসি কুষ্টিয়াতে।খোজ করি তাকে।তাও খবর পাইনি তার।
আজ শুধু বলতে চায়।আমি তোমাকে ভালোবাসি আজো ভালোবাসি।জানি সমাজ মেনে নিবেনা যে আমি একজন খুনির সাথে সম্পর্ক করি। তাতে আমার কিছু এসে যায় না।কেননা জীবনটা আমার।আমি কাকে ভালোবাসবো কাকে নিয়ে ঘর বাধবো সেইটা আমারইই সিদ্ধান্ত।আর আমি মানি একটা কথা অপরাধ কে ঘৃণা করো, অপরাধীকে নয়।
তোমার অপেক্ষায় এখনো পথ চেয়ে বসে আছি।তুমি যদি ফিরতে……….