
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এর নিউ একাডেমিক বিল্ডিং এর ১৬ তলা ভবনের প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একটি মাত্র লিফট। ভবনটির নয় তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ও অফিস থাকলেও থাকলেও লিফট উঠানামা করে মাত্র ছয় তলা পর্যন্ত।
ছয় তলায় উঠতে গিয়েই লিফটের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। ধাক্কাধাক্কি করে লিফটে উঠতে গিয়ে ছাত্রীদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সকালে অনেক ডিপার্টমেন্ট এ ক্লাস থাকায় সময় মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ একটি মাত্র লিফট দিয়ে উঠানামা করতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট লিফটের সেন্সর। ফলে যেকোনো সময়ই ঘটতে পারে দূর্ঘটনা। প্রায়ই লিফট নষ্ট হয়ে আটকা পরার খবরও পাওয়া যায় শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ভবনটিতে সাতটি লিফট লাগানোর জায়গা রাখা হয়েছে। লাগানো হয়েছে মাত্র দুটি। এর মধ্যে একটি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অপর একটি শিক্ষার্থীদের জন্য।
এছাড়াও ভবনটির ষষ্ঠ তলায় রয়েছে লাইব্রেরি ও রেফারেন্স রুম। ৫ম তলায় রয়েছে ডিন অফিস ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর। ফলে প্রায় ১৮,০০০ শিক্ষার্থীর ভরসা করতে হয় একটিমাত্র লিফটের উপর।
ভবনটিতে পনেরটি বিভাগে মোট ৭ হাজার ৮৮০ শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে রয়েছে ১ হাজার ২২৩ শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ১ হাজার ২২০, মার্কেটিং বিভাগে ৭৫২, ফিন্যান্স বিভাগে ৮২৬, আধুনিক ভাষা ইনিস্টিটিউট বিভাগে ৩৪২, আইন বিভাগে ৮৫০ , ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে ২০৫, নৃবিজ্ঞান বিভাগে ৫১৫, গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৩৮৮, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে ১৩১, ফার্মেসি বিভাগে ২৮৬, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ৩০৮, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩৮৫, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ১১৯, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ১২৬ জন শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ২০ তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০১৩ সালের মধ্যে ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রীর দাম ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় ছয়তলা পর্যন্ত করে নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা হয়। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এই টাকা থেকে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় এই ভবনটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ভবনের নির্মাণকাজের জন্য সাত দফা দরপত্র আহবান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু একটি দরপত্রেও কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। সবশেষ ২০১৪ সালের মার্চে অষ্টম দরপত্রের মাধ্যমে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২০১৫ সাল থেকে তারা কাজ শুরু করে এখন পর্যন্ত অষ্টম ও নবম তলার কাজ শেষ করে বিশ্বাবদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে । আরও চার তলার কাজ চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে আইন বিভাগের ১৪ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী বন্যা বলেন, লিফটে অতিরিক্ত চাপ হওয়ায় লিফট প্রায়ই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো সময় বড় কোনো দূর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পায় ২-৩ বার পর সুযোগ পাওয়া যায়। ফলে আমাদের সময়ও নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) সেলিম খান বলেন, এটা আমাদের দায়িত্ব না এটা ইইডির দায়িত্ব। কিন্তু আমার কাছে যতটুকু তথ্য আছে খুব দ্রুত আরও ৩ টি লিফট সংযুক্ত হবে। তবে এটা ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে।