
কুষ্টিয়া সুগার মিলে প্রতি বছর লোকসানের পাল্লা যেমন ভারি হচ্ছে তেমনি বাড়ছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। সিবিএ নেতাদের সাথে আঁতাত করে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা টেন্ডার বানিজ্য, লোক নিয়োগ আর ভুয়া বিল ভাউচারে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। কুষ্টিয়া সুগার মিলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা হলে জানান,‘ কুষ্টিয়া সুগার মিল এমনিতেই রুগ্ন। কোটি কোটি টাকা লোকসানের বোঝার মিলের ওপর। মিলের লোকসান বাড়লেও অনিয়ম, দুর্ণীতি আর লুটপাট থেমে নেই। শ্রমিক কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন না পেলেও কিছু সিবিএ নেতা আর প্রশাসনের এমডি থেকে শুরু করে অন্য কর্মকর্তারা দুর্নীতি অনিয়ম করে লাখ লাখ টাকা পকেটে ভরছেন।
মিলে শ্রমিক, অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ, টেন্ডার বানিজ্য আর ভুয়া বিল ভাউচারে উঠে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ টাকা যাচ্ছে সিবিএ সেক্রেটারি আনিসুর রহমান, জিএম অ্যাডমিন আকুল হোসেব আর এমডির পকেটে। সম্প্রতি মিল থেকে মৌসুমী শ্রমিক ও কর্মচারীদের নামে ভুয়া বিল উঠেছে। এছাড়া পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগসহ নানা খাতে অনিয়মের ছড়াছড়ি রয়েছে।
চলতি মৌসুমে এমডি নিজে বেশ কিছু ভয়া বিল করে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছে। এরকম কয়েকটি ভৌতিক বিল ঘেটে দেখা গেছে, বিদু্যূত ও যান্ত্রিক বিভাগে ৫জন পাহারাদার দিয়েছে এমন দেখিয়ে ৯০হাজার ৬৫০ টাকা বিল তোলা হয়েছে। যে ৫জনের নামে বিল তোলা হয়েছে তার একজন শহরের লাহিনী বটতলা এলাকার শফিকুল, মোল্লাতেঘোরিয়া এলাকার রিতান আলী, কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগর এলাকার জাহাঙ্গীরসহ আরো দুইজন।
ওইসব এলাকায় খোঁজ নিয়ে এসব লোকের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। শুধু মাত্র কাগজে-কলমে লোক দেখিয়ে বিল তুলে নিয়েছেন এমডি। একই ভাবে ইক্ষু বিভাগেও ৬৯ হাজার টাকার আরো একটি ভৌতিক বিল উত্তোলন করেছেন এমডিসহ তার সহযোগিরা। এসব বিল যাদের নামে তোলা হয়েছে সেই সব লোকের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এরকম অংখস্য ছোট ছোট বিল তুলে নেয়া হয়েছে এক মৌসুমেই। এছাড়া মিলেল চিটাগুড় বিক্রি থেকে ঠিকাদারের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা কমিশন নেয়ার অভিযোগ উছেছে এমডি, সিবিএ নেতা থেকে শুরু করে জিএম অ্যাডমিনের বিরুদ্ধে।
একই ভাবে পুরাতন কর্মচারীদের বাদ নিয়ে কর্পোরশনের নিষেধাজ্ঞার পরও ব্যাক ডেটে ২০জনজনকে অস্থায়ী (কানামুনা) শ্রমিক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন এমডিসহ সিবিএ নেতারা। এজন্য প্রতিজনের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা। সিবিএ নেতা আনিসুর রহমান তার পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। ব্যাক ডেটে কাগজপত্র দেখিয়ে এসব জায়েজ করার চেষ্টা করছেন এমডি। তবে দুর্নীতির এ বিষয়ে একে অন্যর ওপর দায় চাপালেন সিবিএ নেতা আনিসুর রহমান। তিনি বলেন,আমরা ভোটে নির্বাচিত। শ্রমিকদের ভালমন্দ দেখি। বিল যেসব উত্তোলন হয়েছে তা এমডিসহ প্রশাসনের লোকজন বলতে পারবেন।’ আর ভূয়া বিলসহ নানা অনিয়মের বিষয়টি প্রমানসহ দেখালে মিলের এমডি গোলাম সারওয়ার মুর্শেদ নানা ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করেন। তিনি দায় চাপানোর চেষ্টা করেন অন্যদের ওপর।
নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে কুষ্টিয়া সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম সারওয়ার মুর্শেদ বলেন,‘ ঠিকাদারদের বিল দিতে কিছু বিল এভাবে তোলা হয়েছে। বিষয়টি সিবিএ নেতা আনিসসহ অন্যরাও জানেন। এ ভাবে বিল তোলা যায় কি-না জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এছাড়া শ্রমিক নিয়োগ, ঠিকাদার নিয়োগেও দুর্র্নীতির বিষয়ে তিনি নিজের মত ব্যাখা দেন।’ মিল বাঁচাতে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির পাশাপাশি সব অনিয়ম বন্ধে জরালো পদক্ষেপ নেয়া হবে এমনটি মনে করছেন মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীরা।