
কুষ্টিয়ার জেলার দৌলতপুর উপজেলার আবাদি জমির সিংহ ভাগই চলতি মৌসুমে তামাক চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে ব্যপকহারে তামাকচাষ বেড়ে যাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাছাড়া বিএডিসির সেচ স্কীম গুলোতে ব্যপক হারে তামাক চাষ হচ্ছে। শুধুমাত্র দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৬৫ ভাগ জমিতে তামাকের আবাদ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারিদের গাফলতি, কর্তব্য অবহেলার কারণে এবার এ এলাকায় তামাক নামের বিষবৃক্ষের চাষে ঝুকে পড়ছে বেশির ভাগ কৃষকেরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে দৌলতপুর উপজেলার বিএডিসির সেচ স্কীমগুলোতেও ব্যাপক হারে তামাক চাষ হচ্ছে। রিফায়েতপুর বিন্দিপাড়া,ঝাউদিয়া, জয়ভোগা, বোয়ালিয়া, গোয়ালগ্রাম সহ বিএডিসির প্রায় সবগুলো সেচ স্কীমের আওতাভুক্ত কৃষি জমিতে তামাকের চাষ ছাড়া অন্য কোন ফসল দেখা যায়নি। বিগত বছর গুলোতে তামাক চাষে অধিক লাভবান হওয়ায় এবং কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারিদের উদাসীনতা চাষীদের তামাক চাষে আরো উৎসাহিত করে তুলছে । অন্য দিকে খাদ্যশষ্য উৎপাদনের জমি অধিকহারে তামাক চাষে ব্যবহৃত হওয়ায় এবার বোরোর আবাদ কম হওয়ায় কুষ্টিয়ায় মারাত্নক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে। যার ফলে বর্তমান মহাজোট সরকারের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন মুখ থুবড়ে পড়বে। দেশের অন্যতম তামাক উৎপাদনকারী এলাকার মধ্যে কুষ্টিয়া অন্যতম। মাঠের পর মাঠ শুধু তামাকের চাষ হলেও এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই খোদ কৃষি অফিসে। তবে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জেলায় সর্বমোট আবাদি জমির পরিমান ১ লক্ষ ১৫হাজার ৯৭৮হেক্টর। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার ২৮৯ হেক্টর। ডাল জাতীয় ফসল ১৩ হাজার ৫৩৬ হেক্টর। তৈল জাতীয় ফসল ৫ হাজার ৭০৫ হেক্টর। সবজি ৬ হাজার ৭২০ হেক্টর। মসলা জাতীয় ১১ হাজার ২৬২ হেক্টর, আলু ২ হাজার ৬৪০ হেক্টর, মিষ্টি আলু ১১৫ হেক্টর, গম ১৫ হাজার ৬২৫ হেক্টর, ভুট্টা ৫ হাজার ১৯০ হেক্টর এবং ১৮ হাজার ৮৫০ হেক্টরে তামাক চাষ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও তামাক কোম্পানীগুলোর তথ্যমতে, তামাকের চাষ হয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার ২�শ হেক্টর জমিতে, তামাক উৎপাদনকারী কোম্পানীগুলোর ঘনিষ্ট সুত্র মতে, এ বছর কুষ্টিয়া অঞ্চলে আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানী প্রায় ৯ হাজার হেক্টর, ঢাকা টোব্যাকো ১৬ হাজার হেক্টর, জামিল টোব্যাকো ১২শ হেক্টর এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আরো ৯ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে যা মোট আবাদী জমির প্রায় অর্ধেক। তাই এ বছর জেলার অর্ধেক জমিতে তামাক চাষের ফলে খাদ্যশষ্য উৎপাদন মারাত্বকভাবে ব্যহত হবে। দৌলতপুর উপজেলায় ৩৩ হাজার হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হচ্ছে। পরিবেশ গবেষক বাংলাদেশ পরিবেশ ক্লাব কুষ্টিয়ার সভা প্রধান গৌতম কুমার রায় বলেন, এমন একটা সময় আসবে যখন তামাক চাষের ফলে কুষ্টিয়ায় আর কোন ফসলের চাষ করা সম্ভব হবেনা। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা এবং খাদ্য জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এখনই তামাকের চাষ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এ অঞ্চলে তামাক চাষ বৃদ্ধির ধারা যেভাবে উর্ধমুখী হচ্ছে, এর ফলে এ এলাকায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিবে।